ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত গজনী অবকাশ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:১২, ১২ এপ্রিল ২০২৪  

ঈদের ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত গজনী অবকাশ

ঈদের ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত গজনী অবকাশ

ঈদ উপলক্ষে পরিবার পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি এবং প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্র ‘গজনী অবকাশ’ এ পর্যটকের ঢল নেমেছে।   

কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে সপরিবারে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভ্রমণে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার দর্শনার্থীরা। ফলে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠেছে ‘গজনী অবকাশ’। পর্যটকের এমন উপস্থিতিতে দারুণ খুশি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা।

সারি সারি গাছ। যে দিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। সবুজ রঙের আভা ছড়িয়ে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। শাল, গজারি, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, সমতল ভূমির সবুজের সমারোহ তাদের হাতছানি দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের। সবুজে মোড়ানো পাহাড় আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সবুজে আর কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নির্মাণাধীন আরো কিছু স্থাপনায় নতুন এক নান্দনিক রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে বৃক্ষশোভিত এ পর্যটন কেন্দ্রটি।   

এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওয়াটার পার্ক, ভাসমান সেতু, প্যারাট্রবা, জিপ লাইনিং, ঝুলন্ত ব্রিজ, কেব্ল কারসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণে ‘গজনী অবকাশ’ কেন্দ্র পরিণত হয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণে।

১৯৯৩ সালে শেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদারের উদ্যোগে এ অবকাশ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। আর এখন তো শেরপুর মানেই ‘গজনী অবকাশ’পর্যটন কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এখানে। সে হিসেবেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে এ অবকাশ কেন্দ্রে নির্মিত হয়েছে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ’। সেই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ জাদুঘর।   

এখানে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি করা হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াক ওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত ‘আলোকের ঝরনাধারা’।

এ পর্যটন কেন্দ্রের উত্তর পাশে অবস্থিত ‘গারো মা ভিলেজ (অমৃতলোক)। এখানে মাশরুম ছাতার নিচে বা পাখি বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধানের জমি এবং পাহাড়ি জনপদের জীবনধারা উপভোগ করা যায়। শিশুদের বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ভাস্কর্য। আছে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু কর্নার। গারো পাহাড়ের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’। ওই টাওয়ারে উঠে উত্তরে তাকালে চোখে পড়বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সবুজে ঢাকা পাহাড়। ‘গজনী অবকাশ’কেন্দ্রে আসা পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য রয়েছে শতাধিক দোকান।

শুক্রবার ‘গজনী অবকাশ’ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অগণিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার-হাজার দর্শনার্থী এসেছেন। তারা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করছেন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। স্মৃতি ধরে রাখতে স্বজন, বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে তুলছেন ছবি বা সেলফি। 

দর্শনার্থী মাসুদ ও লাকী নামের দম্পতি জানান, তারা ঢাকায় থাকেন। ঈদের ছুটিতে শহরের কোলাহল ছেড়ে তারা গহনী অবকাশে ঘুরতে এসেছেন। গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে।

এখানকার ব্যবসায়ী মিজান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দর্শনার্থী শূন্য ছিল পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু ঈদেও ছুটিতে প্রচুর দর্শনার্থী আসতেছে এখানে। আমাদের বেচাকেনাও অনেক ভালো। আশা করছি অন্তত এক সপ্তাহ ধরে দর্শনার্থীদেও উপস্থিতি থাকবে। ফলে ভালোই লাভবান হবেন জানান এ ব্যবসায়ী।

ঝিনাইগাতী থানার ওসি (তদন্ত) ইসকান্দার হাবিব বলেন, আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারে তার জন্য ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।  

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়