ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

উত্তরের অর্থনীতি বদলে দেবে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৩০ আগস্ট ২০২৩  

উত্তরের অর্থনীতি বদলে দেবে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র

উত্তরের অর্থনীতি বদলে দেবে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চালু হচ্ছে অনলাইন চা নিলাম কেন্দ্র। বর্তমানে চট্টগ্রাম এবং শ্রীমঙ্গলে দুটি চা নিলাম কেন্দ্র চালু রয়েছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর দেশের তৃতীয় এই চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

জেলায় চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হলে তৈরি করা চায়ের পরিবহন খরচ কমে যাবে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নিলাম কেন্দ্রে চায়ের উন্মুক্ত কেনাবেচায় ক্ষুদ্র চা চাষিরা চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এতে গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা।সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, জেলার চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। অনলাইন এই চা নিলাম কেন্দ্র চালু করতে এরই মধ্যে ওয়ার হাউজ, ব্রোকার হাউজ নির্মাণসহ বায়ারদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এখন শুধুই নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের অপেক্ষা।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড সূত্র জানায়, পঞ্চগড়ে ২০০০ সাল থেকে চা চাষ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকার নদী সংলগ্ন এবং পতিত জমিতে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে চা চাষের পরিধি। এক পর্যায়ে গোটা এলাকা চায়ের সবুজে ভরে ওঠে। জেলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চা আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। ৮টি নিবন্ধিত ও ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগান, সাত হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং এক হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে উঠেছে এখানে।

পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটও। এরইমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৪৫৭ দশমিক ২৯ একর, লালমনিরহাটে ২২২ দশমিক ৩৮ একর, দিনাজপুরে ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০ দশমিক ৫৯ একর জমিতে চা আবাদ সম্প্রসারণ হয়েছে। সর্বশেষ উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়সহ পাঁচ জেলায় মোট ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে ৩০টি চা বাগান এবং ৮ হাজারের বেশি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান গড়ে উঠেছে।

চা উৎপাদনের হিসাবে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে এ অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০২১ সালে এ চা অঞ্চলে চা আবাদে জমির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর। উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা। ২০২২ মৌসুমে এক কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে এখানে, যা বিগত বছরের তুলনায় ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি বেশি এবং দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশ।

বৈশ্বিক মহামারি উপেক্ষা করে জেলার ২৫টি চা কারখানায় উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৬০ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। চা বাগান আর চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।

তবে কয়েক বছর ধরে চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হয় ক্ষুদ্র চা চাষিদের। হতাশা দেখা দেয় চা চাষিদের মধ্যে। কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির নির্ধারিত ১৮ টাকা কেজি দরেও কারখানায় পাতা বিক্রি করতে পারেন না চাষিরা। বাধ্য হয়ে তারা ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এর বাইরে নানান অজুহাতে কাঁচা পাতার ওজন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে মূল্য পরিশোধ করেন কারখানা মালিকরা। তবে এখানে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু হলে চা চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা তাদের।পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ক্ষুদ্র চা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা চার-পাঁচ বছর ধরে চা আবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাতা বিক্রি করতে হয়। ১৮ টাকা কেজি দরে পাতা কেনার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়। আবার পাতার ওজন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করেন কারখানা মালিকরা। এখানে চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু হলে আশা করি আমরা উপযুক্ত দাম পাবো। আমরা চাই দ্রুত এই নিলাম কেন্দ্র চালু করা হোক।

উপজেলা সদরের সাজেদা-রফিক চা কারখানার পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান সুমন বলেন, এখানে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হলে আমাদের পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে। বর্তমানে আমাদের কারখানায় উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে পাঠাতে হয়। এজন্য অতিরিক্ত পরিবহন খরচ লাগে। আমাদের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমলে চা চাষিরাও বেশি দাম পাবেন। তবে চা চাষিরা ভালো মানের কাঁচা পাতা সরবরাহ করতে পারলে আমরাও ভালো মানের চা উৎপাদন করতে পারবো। এতে চা চাষিরাও কাঁচা চা পাতার ভালো দাম পাবেন।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমির হোসেন বলেন, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় প্রতিনিয়ত চা চাষের পরিধি বাড়ছে। এখানে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম অথবা শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে কেনাবেচা হয়। গত বছরের ২৩ অক্টোবর পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর কাজ শুরু করে বাংলাদেশ চা বোর্ড। দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু করতে ওয়ার হাউজ, ব্রোকার হাউজ অনুমোদন দেওয়া হযেছে। এরইমধ্যে অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র্রটি উদ্বোধন করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এর উদ্বোধন করবেন। নির্দেশনা মতো আমরা সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছি। এখানে অনলাইন বেজ নিলাম কেন্দ্রটি চালুর পর চাষি থেকে শুরু করে চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই সম্পৃক্ত থাকবেন। বিশেষ করে চা চাষিরা নিজেরাই দেখতে পাবেন চা’র মূল্য এখন কোথায় কী রকম চলছে। নিলাম কেন্দ্রে চায়ের মূল্য যখন সবার কাছে উন্মুক্ত হবে, তখন ন্যায্যমূলের বাইরে কাঁচা পাতা কেনার সুযোগ থাকবে না। নিলাম কেন্দ্রটি চালুর ফলে গোটা উত্তরের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আমরা মনে করি।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়