ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

কারিগরি শিক্ষা চালু হচ্ছে ১ হাজার মাদ্রাসায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ৭ মার্চ ২০২৪  

কারিগরি শিক্ষা চালু হচ্ছে ১ হাজার মাদ্রাসায়

কারিগরি শিক্ষা চালু হচ্ছে ১ হাজার মাদ্রাসায়

সমাজের সব পর্যায়ে কাজ করছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের বড় অংশ চাকরি করে মসজিদ-মাদ্রাসার মোয়াজ্জিন, খতিব পদে। দাখিল পাস করে ঝরে যাচ্ছে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এই শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষার্থীদেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে এবার এমপিওভুক্ত এক হাজার মাদ্রাসায় কারিগরি কোর্স যুক্ত করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। নানা কারণে এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। বৃহৎ এই শিক্ষার্থীদেরকে কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়া হলে তা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, কারিগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক হাজার মাদ্রাসায় কারিগরি কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে মাদ্রাসা নির্বাচন, ট্রেড নির্বাচন, শিক্ষক সংখ্যা, অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তথ্যের প্রতিবেদন অধিদপ্তরকে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন উপসচিব হাছিনা আক্তার।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে বিশেষভাবে আরবি ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। যেন এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শ্রম বাজারে সহজে কাজের সুযোগ পান। কিন্তু আমাদের দেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় আরবি ভাষার ব্যাপকতা থাকলেও শিক্ষার্থীরা আরবি বলতে ও বুঝতে পারে না। আগামীর বাজার বিবেচনায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও যেন কারিগরি কাজ করতে পারেন এ কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
সারাদেশে চার স্তরের এমপিওভুক্ত আট হাজার ২২৯টি মাদ্রাসা আছে। এরমধ্যে দাখিল মাদ্রাসা ৫৭৬৮, আলিম মাদ্রাসা ১২৮৪, ফাজিল মাদ্রাসা ৯৯৩ ও ১৮৪টি কামিল মাদ্রাসা। এর ৫৪০টি মাদ্রাসায় কারিগরির বিভিন্ন ট্রেড চালু আছে। এবার আরও এক হাজার মাদ্রাসায় কারিগরির ট্রেডগুলো যুক্ত হবে।
আট হাজারের বেশি মাদ্রাসা থেকে এক হাজার মাদ্রাসা নির্বাচন ও জনবল সংক্রান্ত বিষয়ে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মাদ্রাসা নির্বাচনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু শর্ত রয়েছে। যেসব মাদ্রাসা এসব শর্ত পূরণ করবে তাদেরকে আমরা প্রাথমিক তালিকায় রাখব।

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা, ভৌত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও পাবলিক পরীক্ষার ফল গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ মাদ্রাসা নির্বাচনের পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নেওয়ার বিষয় রয়েছে। জনবল সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জনবল কাঠামোর অনুমোদন আছে। এ কারণে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।
গত বছর দাখিল পরীক্ষায় সাড়ে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী নিবন্ধন করলেও অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার শিক্ষার্থী। আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় ওই বছর অংশ নিয়েছিল মাত্র ৮৪ হাজার পরীক্ষার্থী। বোর্ডসূত্র বলছে, দাখিলে যেসব পরীক্ষার্থী অংশ নেয় তার ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। যা দিন-দিন বেড়েই চলছে।

তবে এসব শিক্ষার্থী কোথায় যায়, কি পড়ে, কোথায় চাকরি করে তা নিয়েও বিস্তারিত তথ্য নেই শিক্ষা পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় কারিগরি বিষয় যুক্ত হলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা কেউ বসে থাকবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি মাদ্রাসায় অন্তত দুটি কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। কম্পিউটার, ওয়েল্ডিং, ফুড, অটোমোবাইলস, ইলেক্ট্রনিক্সের মতো বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দক্ষ হবে। ট্রেড ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেওয়া হবে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে। প্রতিটি মাদ্রাসায় অন্তত দুজন ট্রেড ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেওয়া হবে। ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে দুজন কর্মচারী নিয়োগ পাবেন। ল্যাব ও যন্ত্রপাতির জন্য মন্ত্রণালয় আলাদা স্কিমের ব্যবস্থা করবে। 
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ৫৪০টি মাদ্রাসায় কারিগরি ট্রেড চালু আছে। এক হাজার মাদ্রাসায় চালু করা হলে এই সংখ্যা দেড় হাজারে ঠেকবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীরা কি শিখছে এ বিষয়ে ভালো পর্যবেক্ষণ দরকার। কারণ অনেক মাদ্রাসায় ট্রেড চালু থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই।
কবে হবে বাস্তবায়ন ॥ এক হাজার মাদ্রাসায় কারিগরি ট্রেড খুলতে খুব শীঘ্রই সব মাদ্রাসায় চিঠি দেবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এরপর তাদের ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ ছাড়াও মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে দুজন ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির লাগাম টানতে মাদ্রাসা নির্বাচনেও কঠোর থাকবে মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে সরকার কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী সম্পৃক্ততা বাড়াতে চায়। ফলে চলতি বছরেই সবধরনের কার্যক্রম শেষ হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের শুরুতেই এসব মাদ্রাসায় কারিগরির বিষয় যুক্ত হবে।

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়