ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

পাঠ্যক্রমে দক্ষতা যুক্ত না হলে কোর্স অনুমোদন-নবায়ন বন্ধ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১৬ মার্চ ২০২৪  

পাঠ্যক্রমে দক্ষতা যুক্ত না হলে কোর্স অনুমোদন-নবায়ন বন্ধ

পাঠ্যক্রমে দক্ষতা যুক্ত না হলে কোর্স অনুমোদন-নবায়ন বন্ধ

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রমে তাত্ত্বিক পড়াশোনার সঙ্গে কর্মদক্ষতার বিষয় যুক্ত না থাকায় শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। এই তাত্ত্বিক শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসছে না। এ জন্য শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তৈরি করা হচ্ছে ‘মিড লেভেল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফ্রেম ওয়ার্ক’।এই কাঠামোর আলোকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন কোর্সের পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। যুক্ত করতে হবে একাডেমিক স্কিল, সফট স্কিল ও কো-কারিকুলাম হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কর্মদক্ষতার বিষয়। অন্যথায় নতুন করে কোর্স অনুমোদন বা বিদ্যমান কোর্স নবায়ন করা হবে না। এই বলে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের অনেকে কাঙ্ক্ষিত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। মূলত একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর কোনো সুযোগ না থাকা এবং কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে চাকরি বাজারে পিছিয়ে পড়ছে দেশের শিক্ষার্থীরা। অথচ বিদেশ থেকে গ্র্যাজুয়েটরা এসে এসব পদ দখল করে নিচ্ছেন। এতে দেশের উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদেশি আড়াই লাখ কর্মী কর্মরত ছিলেন। এক বছরে তাঁরা বেতন বাবদ নিয়ে গেছেন ৪.৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, বিশ্বের ১১৬টি দেশ থেকে কর্মীরা এসে বাংলাদেশে কাজ করছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান ও ফিলিপিনো। অন্য দিকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা বেকারের হার ১২ শতাংশ।

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা করা আর কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার মধ্যে বিশাল পার্থক্য থাকে। তাত্ত্বিক লেখাপড়া এবং কর্মদক্ষতা এই দুটি যুক্ত করতে পারলে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি কর্মদক্ষতাও বেড়ে যাবে। ডাক্তার ও প্রকৌশলীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্দিষ্ট সেমিস্টারে গিয়ে তিন থেকে ৯ মাসের ইন্টার্নশিপ করে। ইন্টার্নশিপ শেষ করতে না পারলে তারা সার্টিফিকেট পায় না। একইভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গ্র্যাজুয়েটকে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ভালো পেশাজীবী, শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যেমন নেতৃত্বের গুণাবলি, জনসমক্ষে কথা বলার দক্ষতা, যোগাযোগব্যবস্থা। সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, সব মন্ত্রণালয়ে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের কী ধরনের দক্ষতা দিতে হবে, তা নিয়ে ‘মিড লেভেল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফ্রেম ওয়ার্ক’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এই কাঠামো তৈরিতে ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহকে আহ্বায়ক এবং ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে সদস্যসচিবের দায়িত্ব দিয়ে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন।

কমিটিতে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষিসহ দেশের ছয়টি ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে একজন করে সদস্য রাখা হয়েছে। বাকি দুজন সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ প্রতিনিধি।

ড. আবু তাহের বলেন, ‘প্রতিটি দেশেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে বিদেশি দক্ষ লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। মিড লেভেল স্কিলের (মধ্যম মানের দক্ষতা) পদগুলো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে পূরণ করা হয়। তবে আমাদের দেশে এসব পদের জন্যও বাইরে থেকে লোক নিয়োগ করতে হয়। এর প্রধান কারণ হলো আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা নিলেও কর্মক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতাগুলো গ্রহণ করছে না। কোর্স কারিকুলামে এসব দক্ষতা নিয়ে কোনো কো-কারিকুলাম নেই। এখন থেকে এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে ইউজিসি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের কারিকুলামে প্রয়োজনীয় দক্ষতাভিত্তিক কো-কারিকুলাম যুক্ত করতে হবে। অন্যথায় কোর্স নবায়ন বা নতুন করে কোনো কোর্সের অনুমোদন দেওয়া হবে না।’

মিড লেভেল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফ্রেম ওয়ার্ক তৈরিতে গঠিত কমিটি সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন একাডেমিক স্কিলের পাশাপাশি সফট স্কিলও রাখা হবে। একাডেমিক স্কিলের মধ্যে জনপ্রিয় ও সময়োপযোগী হিসেবে রাখা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস ও মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিষয়গুলো। অন্যদিকে সফট স্কিল হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রেজেন্টেশন, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, পিপল ম্যানেজমেন্ট স্কিল, প্রবলেম সলভিং স্কিল, নেগোশিয়েশন স্কিল, স্ট্রেস টেকিং অ্যাবিলিটি ও ডিসিশন মেকিং দক্ষতাগুলো দেওয়া হবে। এ ছাড়া কো-কারিকুলাম হিসেবে শিক্ষার্থীদের রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স (গোলটোবিল বৈঠক), রোল প্লেয়িং মেথড ও কেস স্টাডি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়